অর্থীর স্ট্যানফোর্ড জয়
আপলোড সময় :
০৬-১০-২০২৪ ০৪:২৭:৪৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০৬-১০-২০২৪ ০৪:৩০:২৫ অপরাহ্ন
বাংলা স্কুপ, ৬ অক্টোবর:
‘‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় হয়, কখনও ছাড়িয়ে যায় নিজের স্বপ্নকে। জয়ী হয় স্বপ্ন আর জয়ী হয় স্বপ্নচারী মানুষ।’’
তেমনি এক স্বপ্নজয়ী তরুণী তাসমিয়া তাবাসসুম অর্থী। ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতেন সমসাময়িকদের থেকে ভিন্ন কিছু করার। সেই লক্ষ্যেই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন শতভাগ স্কলারশিপ নিয়ে কম্পিউটার সাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং-এ তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন বিশ্বের অন্যতম স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় স্ট্যানফোর্ডে। এ পর্যন্ত পৌঁছাতে তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে এক সুদীর্ঘ ভর্তি প্রক্রিয়া। কীভাবে স্ট্যানফোর্ডে ভর্তি এবং শতভাগ স্কলারশিপ পাওয়া সম্ভব, এসব জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে ইচ্ছুক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নানা পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
অর্থীর জন্ম পটুয়াখালী জেলায়। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের হাত ধরে পটুয়াখালী থেকে ঢাকায় গিয়ে স্বনামধন্য ভিকারুন্নিসা নুন স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ছোটবেলা থেকেই অসম্ভব মেধাবী অর্থী। স্কুল কলেজে সবসময়ই প্রথমের কাতারে ছিলেন। জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছেন। সাথে ঢাকা বোর্ডে স্ট্যান্ড করেছেন প্রতিবারই। পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় হাই স্কুলে বিনাবেতনে পড়ার সুযোগ পান। পড়ালেখার পাশাপাশি সবসময়ই যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমের সাথে। ছোটবেলা থেকেই মায়ের অনুপ্রেরণায় নাচ, গান, চিত্রাঙ্কনসহ অনেক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিলেন। এই অভ্যাসই ধরে রেখেছেন হাইস্কুল জীবনেও। পড়ালেখার পাশাপাশি সমান তালে চালিয়ে গিয়েছেন ফরাসি ভাষা শেখা, স্কুলে জ্যোতির্বিজ্ঞান ক্লাব প্রতিষ্ঠা, ব্রিটিশ কাউন্সিলসহ অনেক কিছু। নির্বাচিত হয়েছিলেন ভিকারুন্নিসা নুন কলেজের হেডগার্ল হিসেবে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জাতীয় ফ্রন্টলাইনারদের নিয়ে করেছিলেন এক মাসব্যাপী টেলিভিশন লাইভ।
'যুক্তরাষ্ট্রের পড়াশোনা, গবেষণা, প্রযুক্তি এবং জীবনধারার প্রতি ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক ছিল। বিশেষ করে ৮ম শ্রেণিতে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ এবং প্রস্তুতির সময় স্ট্যানফোর্ড, এমআইটি, হার্ভার্ডের মত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে প্রথম জানতে পারে। সেই থেকেই বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা অনেক ব্যয়বহুল বলে এ লক্ষ্যে আর সামনে আগানো হয় না। এরপর ২০২০ সালে করোনার সময় কলেজ বন্ধ হয়ে অনলাইন কার্যক্রম শুরু হয়। সেই সুবাদে ১০ মিনিট স্কুল থেকে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শতভাগ স্কলারশিপসহ পড়ার গল্প নিয়ে একটি ভিডিও দেখায় পুরনো স্বপ্ন আবার নতুন করে জেগে উঠে।
অর্থী বলেন, 'ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতাম ইঞ্জিনিয়ার হব। মা-বাবা সবসময় অনুপ্রেরণা দিয়েছে, আমাকে বড় কিছু হতে হবে। তবে ভিন্ন কিছু করার চেষ্টায় কখনওই বাধা দেয়নি পরিবারের কেউ। এইচএসসির পর বুয়েটের জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করি। পাশাপাশি নিতে থাকি যুক্তরাষ্ট্রে আবেদন করার প্রস্তুতি।
করোনার কারণে এইচএসসি পিছিয়ে যাওয়ায় আরও বেশি সময় দেন SAT, TOEFL এর প্রস্তুতিতে। পাশাপাশি চলে জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় গোল্ড অনার, নাসা আয়োজিত Breakthrough Junior Challenge সহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন। স্কুলে থাকাকালেই বাংলাদেশসহ যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড’র মত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরদের সাথে গবেষণার সুযোগ পান তিনি। যা পরবর্তীতে প্রকাশিত হয় আন্তর্জাতিক পত্রিকায়। অর্থীর মতে, একাডেমিক রেজাল্ট’র মতই সহশিক্ষা কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমন সব শিক্ষার্থীকে নিতে চায়, যারা নিজ সমাজে কিছু ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পেরেছেন। গ্রামাঞ্চলের স্কুলে মেয়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ ভাতা, বেতন মওকুফ, মেধাবৃত্তি নিশ্চিত করা নিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই কাজ করে যাচ্ছিলেন অর্থী। তিনি মনে করেন, আর্থিক অনটন কখনওই শিক্ষা ও স্বপ্নপূরণের পথে বাধা হওয়া উচিত নয়। স্ট্যানফোর্ডে বিনামূল্যে পড়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে আবেদনের ফি মওকুফ, প্রয়োজন অনুযায়ী স্কলারশিপ পাওয়া নিয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের এখন সাহায্য করেন তিনি।
অর্থী আরো জানান, বিদেশি শিক্ষার্থীদেরকেও প্রয়োজন অনুযায়ী স্কলারশিপ দিয়ে সাহায্য করে স্ট্যানফোর্ডসহ অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এ প্রক্রিয়াটি নিড ব্লাইন্ড নয়। আর্থিক সহায়তার পরিমাণের ওপর ভর্তির সম্ভাবনা নির্ভর করে। তবে আমি যেহেতু শতভাগ স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশুনা করছি। এটি কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। এই স্কলারশিপ আমার পড়াশোনার যাবতীয় খরচ ছাড়াও, ল্যাপটপ, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা, বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার খরচ বহন করে। এমনকি দ্বিতীয় বর্ষে আমি স্ট্যানফোর্ডের স্টাডি অ্যাব্রড প্রোগ্রামে তিন মাস প্যারিসে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। যার সম্পূর্ণ খরচও বিশ্ববিদ্যালয়ই বহন করে।'
মোখলেছুর রহমান/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স